রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
কথায় কথায় ক্ষমতার দম্ভ দেখাত আরিফ-সাবরিনা

কথায় কথায় ক্ষমতার দম্ভ দেখাত আরিফ-সাবরিনা

স্বদেশ ডেস্ক:

জেকেজির করোনার টেস্ট রিপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাবরিনা আরিফ কথায় কথায় ক্ষমতার দম্ভ দেখাতেন। তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ বাগিয়ে নিতে স্বাস্থ্য বিভাগসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করতেন। তাদের ভয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সব সময় তটস্থ থাকতেন।

অন্যদিকে এই দম্পতি জেকেজির মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করতে অদক্ষদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। যে কারণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ বুথ থেকে সংগ্রহ করা তাদের নমুনার একটি বড় অংশই শুরু থেকেই পরীক্ষায় নেগেটিভ আসত। তবে এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস পেত না। গোয়েন্দা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে
গতকাল শুক্রবার ডা. সাবরিনার ফের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সূত্র জানিয়েছে, আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবরিনা আরিফ দুজনই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যে কারণে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের মতো তাদেরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবাধ যাতায়াত ছিল। তারা কোনো অনুমতি ছাড়াই স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাত্যহিক সভা চলাকালেই সেখানে ঢুকে যেতেন। এ নিয়ে কেউই টুঁ শব্দ করতে ভয় পেতেন। করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার আগে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন জেকেজি কীভাবে করোনার নমুনা সংগ্রহ করবে, তাদের কী পরিমাণ দক্ষ টেকনিশিয়ান রয়েছে? জবাবে আরিফুল হক চৌধুরী বলেছিলেন তাদের দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাব নেই। সারাদেশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। তার কথায় স্বাস্থ্য বিভাগের ওই কর্মকর্তার সন্দেহ হয়েছিল।

কিন্তু এ নিয়ে আর বেশিদূর যেতে পারেননি। কিছুদিন পরই ওই কর্মকর্তা জানতে পারেন জেকেজি নারায়ণগঞ্জ থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করছে তার বেশিরভাগই যথাযথভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ফলে পরীক্ষায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেগেটিভ আসছে। এ বিষয়টি ওই কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ নিয়ে কানাকানি শুরু হলে আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবরিনা আরিফ দম্পতি এক পর্যায়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করলেও পরীক্ষা না করে তা ফেলে দিয়ে করোনার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া শুরু করেন। এসব বিষয়েও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবরিনা আরিফ দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, তারা তদন্তের কোনো দিক বাকি রাখছেন না। যখন যা তথ্য পাচ্ছেন সে ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করছেন। তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদও করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, শুধু করোনা পরীক্ষার নমুনা পরীক্ষার অনুমতিই নয়, তারা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আরও কাজ বাগিয়েছেন। যেখানে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ঠিকমতো পিপিই পাচ্ছিলেন না, সেখানে তাদের কয়েক হাজার পিপিই সরবরাহ করা হয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। ওই সময় সরকারি হাসপাতালগুলোও পিপিই চেয়ে তালিকা পাঠালে সংকটের কারণে তাদের কাটছাঁট করে সরবরাহ করা হতো। অথচ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই জেকেজি হেলথকেয়ারকে চাহিদামতো পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।

জানা গেছে, তেজগাঁও তিতুমীর কলেজের বুথে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের নামে প্রতিদিন রাতে সেখানে পার্টি দিতেন আরিফুল হক চৌধুরী। ওই পার্টিতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ উপস্থিত থাকতেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছে। এসব বিষয়েও তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেখানে রাতে কাদের যাতায়াত ছিল, এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ডা. সাবরিনা ফের ২ দিনের রিমান্ডে

আদালত প্রতিবেদক জানান, করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফের ফের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদ উর রহমান ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ১৩ জুলাই মঞ্জুর হওয়া ৩ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী এ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। ওই সময় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর বেলা পৌনে ২টায় তাকে আদালতে ওঠানো হয়। রিমান্ড আবেদনে আসামি রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পুনরায় রিমান্ড প্রয়োজন বলে রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

রিমান্ড শুনানিকালে আইনজীবী সাইফুজ্জমান তুহিন ও ওবায়দুল হাসান বাচ্চু ডা. সাবরিনার রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। শুনানির সময় তারা কাঠগড়ায় থাকা সাবরিনার সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে সাবরিনা আইনজীবীদের জানান, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান কেন কিছুই নন, মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য তিনি আজ গ্রেপ্তার হয়েছেন। যা শুনানিতে আইনজীবীরা আদালতকে জানান।
রাষ্ট্রপক্ষে তেজগাঁও থানা জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও) এসআই মো. ফরিদ উদ্দিন ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877